আপনি কি প্রায় 4 মাসের গর্ভবতী? তাহলে আপনি গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের ডায়েট চার্টে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছেন।
প্রথম এবং শেষ ট্রাইমেস্টারের থেকে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার অনেক ভাল। তবুও আপনাকে নিজের খাবার এবং পানীয় বুঝে-শুনে খেতে হবে যাতে আপনার শিশু ভাল থাকে।
কী-কী খাবার বেশি করে খেলে আপনার শিশু সুস্থ থাকবে আর সম্পূর্ণ পুষ্টি পাবে আমরা এখানে সেই বিষয়ে কথা বলব। এমনকি আপনি গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে প্রয়োজনীয় খাবারের একটি ডায়েট চার্টও তৈরি করতে পারেন। তাহলে আলোচনা শুরু করা যাক।
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের ব্যাপারে কিছু কথা (About Second Trimester of Pregnancy in Bengali)
4 মাসের গর্ভাবস্থা খুবই অস্বস্তিকর কারণ মাকে কিছু কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যেমন, বমিভাব, মাথাব্যথা, মর্নিং সিকনেস ইত্যাদি। আর তাই, আপনার শারীরিক সমস্যাগুলি, যেমন, রক্তে শর্করার মাত্রা, কোলেস্টেরলের মাত্রা, ক্যালোরি কাউন্ট ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের ডায়েট চার্ট খুবই জরুরি।
শিশুর জন্ম দেওয়া খুবই কঠিন একটি প্রক্রিয়া কারণ মায়ের শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে। এছাড়াও, এই ট্রাইমেস্টারে শিশুর আকার খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় তাই সম্পূর্ণ আর পুষ্টিকর আহার খুবই প্রয়োজনীয়।
চলুন আমরা কিছু খাবারের কথা আলোচনা করি যেগুলি গর্ভবতী মায়ের ডায়েট চার্টে থাকা খুব জরুরি।
4 মাসের গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব (What to Include in Your Pregnancy Diet during the Fourth Month in Bengali)
কিছু কিছু খাদ্যাভ্যাস আছে যা আপনি দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের ডায়েট চার্ট তৈরির সময় মেনে চলতে পারেন:
- প্রোটিন যোগ করা- শিশুর জন্য প্রোটিন খুবই দরকার যেহেতু এই সময়ে কোষ তৈরি হওয়ার জন্য প্রোটিন মূল উপাদান। খুব বেশি করে মাছ আর মুরগির মাংস খাওয়া উচিত। যারা ভেগান তাদের জন্য টোফু আর কিনোয়া ভাল বিকল্প।
- ফাইবারযুক্ত খাবার- ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন, রুটি, ব্রাউন রাইস অথবা পাস্তা ডায়েট চার্টে যোগ করতে হবে কারণ এগুলি কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা অর্শের মতো হজমসংক্রান্ত সমস্যা রোধ করে।
- ফল- ফলে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি, প্রয়োজনীয় ভিটামিন আর মিনারেল আছে। ফলে জল আর ফাইবারও অনেক বেশি থাকে।
- দুগ্ধজাত খাবার- ভ্রূণের হাড় ভাল হওয়ার জন্য খুবই জরুরি।
- বাদাম- বাদাম থেকে বিভিন্ন ধরনের মিনারেল, যেমন, আয়ন, ক্যালসিয়াম, প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। বাদামের মধ্যে পেস্তা, আখরোট, মাখানা, কিশমিশ আর খেজুর ভাল।
- সবজি- সবজিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন C রয়েছে যার মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। শিশুর বৃদ্ধির জন্য এর প্রয়োজন।
- ডিম- ডিমে অনেক প্রোটিন আর প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে।
- মাংস- প্রোটিনের জন্য মাংসও ভাল কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ভাবে খেতে হবে।
- সি ফুড- মাছে রয়েছে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন D আর প্রোটিন যা শিশুর মস্তিস্ক বিকাশের জন্য জরুরি। মস্তিস্ক বিকাশের জন্য DHA খুব দরকার যা মাছে পাওয়া যায়। যদিও মাছ রান্না করে খাওয়া উচিত কারণ কাঁচা মাছ থেকে ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে।
দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে কী-কী খাবার এড়িয়ে যাবেন (Foods to avoid during the second trimester in Bengali)
কিছু কিছু খাবার না খাওয়া আপনার জন্য ভাল। যে-যে খাবার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের ডায়েট চার্টে এড়িয়ে যাবেন তা হল:
- কাঁচা মাংস- কাঁচা মাংস খাওয়া কারোর জন্যই ভাল নয়, তাই যে করেই হোক এটি এড়িয়ে যেতে হবে।
- কাঁচা মাছ- এর থেকে শিশুর প্ল্যাসেন্টার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
- কাঁচা ডিম- স্যালমনেলা নামক একটি ব্যাকটেরিয়া ডিমের কুসুমে থাকতে পারে। শিশুর জন্য এটি ক্ষতিকারক। তাই এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
- যে-মাছে পারদ আছে- সোর্ডফিশ অথবা হাঙরে পারদ আছে যা শিশু আর মা দু’জনের জন্যই মারাত্মক হতে পারে।
- জাঙ্ক ফুড- এগুলি খুব বেশি প্রসেস করা আর অ্যাডিটিভ বা প্রিজারভেটিভ যুক্ত। এগুলি কৃত্তিম উপায়ে তৈরি আর তাই শিশুর শরীরের গঠনের জন্য অপকারী।
- চিজ- কিছু চিজে ছত্রাক থাকে যা একে গেঁজে উঠতে সাহায্য করে, তবে এটি শিশুর বৃদ্ধির জন্য অপকারী। জন্মানোর পর শিশুদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় আর তাই ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া মারাত্মক হতে পারে।
- ইনস্ট্যান্ট ফুড- এগুলি শুধু আপনার শরীরে ক্যালোরি ছাড়া আর কিছুই জোগায় না। তাই এগুলি এড়িয়ে যেতেই হবে।
- খুব মিষ্টি খাবার- ক্যান্ডি আর কুকি যেগুলিতে খুব বেশি চিনি আছে তা খেলে মায়ের বা শিশুর ডায়াবেটিস হতে পারে।
- ক্যাফিন- এর থেকে শিশুর জন্মানোর সময় ওজন কম হতে পারে। বেশি ক্যাফিন খেলে গর্ভপাতও হতে পারে।
- অ্যালকোহল- এটা নিশ্চই বলে দিতে হবে না যে অ্যালকোহল শিশুর জন্য খারাপ, কারণ তারা জানে না কীভাবে অ্যালকোহল হজম করতে হয়। এতে কিছু ডেভেলপমেন্ট ইস্যুও হতে পারে।
- ময়দা দিয়ে বানানো খাবার- এতে শুধু কোষ্ঠকাঠিন্যই নয়, বরং অর্শ অথবা ওজন বৃদ্ধিও হতে পারে।
দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের ডায়েট চার্ট (Second Trimester pregnancy food chart in Bengali)
এবার চলুন দেখে নিই প্রতিদিন পুষ্টিকর আর স্বাস্থকর খাবার খেতে গেলে কী-কী খাদ্য আপনার ডায়েট চার্টে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
সোমবার
- ব্রেকফাস্ট - হালকা আর পেটভর্তি জলখাবার খেতে হলে আপনি তিলের মধ্যে আলু দিয়ে সামান্য নেড়েচেড়ে তার সাথে আটার টোস্ট আর আমের শেক খেতে পারেন।
- স্ন্যাক - দুপুরে কিছু ফল যেমন আঙুর খেতে পারেন যাতে প্রতিটি মিলের মধ্যে বেশি ব্যবধান না থাকে।
- লাঞ্চ - যা আপনার প্রধান খাদ্য যেমন মুগ ডাল, বিনসের সবজি, পেঁয়াজের পরোটা আর টক দই, এই সবই খান।
- স্ন্যাক - চা বা কফি না খেয়ে লেবুর শরবত বা হালকা মশলা দেওয়া ভুট্টার চাট খেতে পারেন।
- ডিনার - রাতের খাবার হালকা রাখুন আর সবজি দেওয়া খিচুড়ি, পাঁপড় আর পুদিনার রায়তা খান।
মঙ্গলবার
- ব্রেকফাস্ট - বেসনের চিলা, ধনেপাতা পুদিনার চাটনি আর দইয়ের ঘোল, অর্থাৎ বাটারমিল্ক দিয়ে দিনের আরম্ভ করুন।
- স্ন্যাক - খাবারের মধ্যে বেশি ব্যবধান রাখবেন না, একটা আপেল খেয়ে নিন।
- লাঞ্চ - সয়াবিনের ঝোল, ঝিঙের সবজি, ডালিমের রায়তা আর ভাত বা রুটি খেতে পারেন।
- স্ন্যাক - যেহেতু একবার ফল খেয়ে নিয়েছেন, তাই সবজি দিয়ে বানানো চিঁড়ের পোলাও আর ডাবের জল খেতে পারেন।
- ডিনার - মুসুর ডাল, টিন্ডার সবজি, রাগির রুটি আর গাজর-মুলোর স্যালাড দিয়ে হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
বুধবার
- ব্রেকফাস্ট - আজ একটু অন্যরকম খাবার খান - দালিয়া। এতে আখরোট বা কিশমিশ যোগ করতে পারেন। এর সাথে একটু গরম দুধ খান।
- স্ন্যাক - একটা সবেদা খেয়ে নিন।
- লাঞ্চ - কাবলি ছোলার সঙ্গে ঢ্যাঁড়সের সবজি, কুলচা আর দই।
- স্ন্যাক - বাদাম খান যেমন, আখরোট আর তার সঙ্গে আমপোড়ার শরবত খেতে পারেন।
- ডিনার - মাশরুম আর কড়াইশুঁটিতে প্রচুর ফাইবার আছে, তার সঙ্গে উচ্ছের সবজি, রুটি আর ভাত।
বৃহস্পতিবার
- ব্রেকফাস্ট - পনির গ্রিলড স্যান্ডউইচ আর কমলালেবুর রস দিয়ে জলখাবার খান।
- স্ন্যাক - তরমুজ খেতে পারেন কারণ এতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।
- লাঞ্চ - যেহেতু আপনার খাবারে প্রোটিন থাকা জরুরি তাই পাঁচমিশেলি ডাল, বেগুনের তরকারি আর শশার রায়তা খেতে পারেন।
- স্ন্যাক - জলজিরা মনকে তরতাজা করে তোলে আর হজমের জন্যও ভাল। চৌকো করে কাটা শশা আর গাজরও খেতে পারেন।
- ডিনার - সয়া চাঙ্ক দিয়ে খুব ভাল তরকারি হয় আর তার সাথে ভাত বা রুটি ও আলু-মেথির তরকারি খেতে পারেন।
শুক্রবার
- ব্রেকফাস্ট - উপমা হল একটি উপাদেয় ভারতীয় খাবার, যা আপনি ওটস দিয়ে বানিয়ে খেতে পারেন। বিনস আর চিনেবাদাম দিয়ে এর স্বাদ বাড়িয়ে নিন।
- স্ন্যাক - পেঁপে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা আটকাতে খুব ভাল কাজ করে আর খিদেও মেটায়।
- লাঞ্চ - অড়হর ডালের সাথে বীটের সবজি ও ভাত বা রুটি খেতে পারেন। শশা বা পেঁয়াজের রায়তা খান।
- স্ন্যাক - ছাতুতেও অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। ক্যাফিন প্রোডাক্টের বদলে ছাতুর শরবত খান।
- ডিনার - মিসি রুটির সাথে লাউয়ের কোফতা আর বিনসের সবজি খান শনিবার
- ব্রেকফাস্ট - রাভা ইডলির সাথে নারকোলের চাটনি আর কফি খেতে পারেন। সপ্তাহে একবার কফি রাখা হয়েছে যাতে সুষমতা বজায় থাকে।
- স্ন্যাক - একটা কলা খেয়ে নিন।
- লাঞ্চ -পনিরে বা ছানায় অনেক প্রোটিন থাকে আর তার সাথে পালং শাক দিয়ে পালক পনির বানিয়ে নিন। রুটি আর রায়তা সহযোগে খান।
- স্ন্যাক - আপনার ডায়েট চার্টে মাখানা যোগ করুন যা আপনাকে শক্তি জোগাবে আর তার সাথে আমন্ড দুধ খান।
- ডিনার - বরবটি কলাই আপনার শিশুর জন্য খুবই ভাল। কুমড়ো থেকেও প্রোটিন আর ফাইবার পাওয়া যায়। এই দু’টির সবজি বানিয়ে তার সাথে রুটি খান। রাতে ভাত না খাওয়াই ভাল।
রবিবার
- ব্রেকফাস্ট - রবিবারের জলখাবারটি একটু বিশেষ রাখুন; মেথি পরোটা আর লস্যি খান।
- স্ন্যাক - মুসাম্বির রস খেতে পারেন কারণ এতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।
- লাঞ্চ - সারা সপ্তাহ স্বাস্থকর খাবার খাওয়ার পর রাজমা স্বাদ বদলাতে সাহায্য করে আর এটা সবারই খুব প্রিয়। সাথে জিরা রাইস আর ফুলকপি-কড়াইশুঁটির তরকারি খান।
- স্ন্যাক - যত পারবেন ড্রাই ফ্রুট খান, যেমন আমন্ড, কিশমিশ, আখরোট, মাখানা, আর সাথে লেবুর শরবত খান।
- ডিনার - রাতের খাবার হালকা রাখুন। মুগ ডালের সাথে ভাত বা রুটি আলু-পেঁয়াজকলির তরকারি খান।
উপসংহার (Conclusion)
এই ডায়েট চার্টটি খুবই সুষম আর স্বাস্থকর যা আপনার শিশুর জন্য খুবই উপকারী, কারণ এতে কিছু মৌলিক উপাদান রয়েছে। এগুলি খুবই সহজলভ্য আর সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়।
Tags:
4th Month Pregnancy Diet Chart in Bengali, About Second Trimester of Pregnancy in Bengali, What to Include in Your Pregnancy Diet during the Fourth Month in Bengali, Foods to avoid during the second trimester in Bengali, Second Trimester pregnancy food chart in Bengali