গর্ভবতী মহিলারা প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান (PMSMA) এর মাধ্যমে কি কি সুবিধা পেতে পারেন?

স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃ যোজনা ২০১৬ সালে প্রবর্তন করেছেন। আমাদের সম্মানীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এটার লক্ষ্য এবং প্রধান সুবিধাগুলি 2016 মন কি বাত অনুষ্ঠানটিতে পর্যালোচনা করেছিলেন।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন কেন গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া আমাদের দেশে বিশেষভাবে উচিত? তিনি এ কথা বলেছেন যে আমাদের দেশের সদ্যোজাত এবং প্রসবের সময় মহিলাদের মৃত্যুর হার অত্যধিক বেশি। তাই প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব যোজনা প্রধানত এই দুটি ব্যাপারেই লক্ষ্য করবে যাতে বিনামূল্যে গুণগত পরিষেবা, প্রসবের আগে এবং প্রসব পরবর্তীকালে মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রদান করা যায়। বিশ্বের সব জায়গাতেই গর্ভবতী মহিলাদের ৯ মাস চলাকালীন একটি সর্বোপরি পরীক্ষার দরকার পড়ে। এই যোজনা এই পরীক্ষাটিও বিনামূল্যে করার সুযোগ করে দেবে।

পি এম এস এম এ যোজনাটি কি?

এটি একটি সরকারি পরিকল্পনা যেটা ন্যূনতম মূল্যের মাধ্যমে গুণগত প্রসব পরবর্তী পরিষেবা, গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষত দ্বিতীয় বা তৃতীয় ত্রৈমাসিককালীন দিয়ে থাকে। বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্য সুবিধা নয় মাসের গর্ভবতী মহিলাকে দেওয়াই এই যোজনার মূল উদ্দেশ্য

পি এম এস এম এ যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি ডাক্তারদের ক্ষেত্রে যাতে তারাও এই পরিকল্পনাটিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণ করে। এটা এমনকি নতুন এবং যথোপযুক্ত কিছু কার্য নির্দেশের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিরও প্রচেষ্টা করছে বেসরকারি সমস্ত কিছুকেই এক্ষেত্রে উদ্যোগী করে তোলার জন্য।

পি এম এস এম এ এর মূল বৈশিষ্ট্য

• গবেষণা অনুযায়ী এক লক্ষ গর্ভবতী মহিলার মধ্যে ১৬৭ জন তাদের প্রাণ হারান গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের সময়। ইউনিসেফ এও বলেছে যে, ৫৫ হাজার গর্ভবতী ভারতীয় মহিলা প্রসবকালীন সময়ে মারা যায়; কিন্তু সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং যথোপযুক্ত উদ্যোগের মাধ্যমে এই মৃত্যুর হার রোধ করা যেতে পারে বা কমানো যেতে পারে। তাই এই ব্যাপারটির গুরুত্ব বুঝতে পেরে ভারত সরকার অপরিসিম গুরুত্ব প্রদান করেছে এবং বিভিন্ন ডাক্তারি পরিষেবা, পরিকল্পনা এবং উদ্যোগ এর জন্য নেওয়া হয়েছে।

• এই পরিকল্পনাটির পরবর্তীকালে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে ভারতের সব গর্ভবতী মহিলাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তারের দ্বারা চিকিৎসার সুযোগ পান। এই পরিকল্পনাটির মূল উদ্দেশ্য হলো সঠিক স্বাস্থ্যসম্মত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে এবং সেই পরীক্ষার পরবর্তীকালে সমস্ত রকম নির্দেশাবলী অনুসরণ করা। সুতরাং খুব দৃঢ়ভাবেই বলা যায় যে এই পরিকল্পনাটি মৃত্যুর হার মা এবং সদ্যোজাত এর ক্ষেত্রে ভারতবর্ষে কমাবে।

• সরকার পি এম এস এম এ যোজনাটির জন্য বেসরকারি দপ্তরের থেকেও সঠিকভাবে সব রকমের সাহায্য লাভ করেছে। বেসরকারি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং সব ধরনের ডাক্তাররাই এই পরিকল্পনাটিকে সাধুবাদ জানিয়ে এগিয়ে এসেছেন গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য।

• প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলা যারা এই পরিকল্পনাটির মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, তারা একটি লাল অথবা সবুজ স্টিকার পান। লাল স্টিকারটি সেই মহিলাদের দেওয়া হয় যারা উচ্চবিপদযুক্ত গর্ভাবস্থায় আছেন এবং সবুজ স্টিকারটি সাধারণ মহিলাদের জন্য, যাদের ক্ষেত্রে কোন রকম বিপদের সম্ভাবনা পাওয়া যায়নি।

  Article continues below advertisment

• পি এম এস এম এ এর মূল উদ্দেশ্য হলো গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখা যাতে মা এবং সদ্যজাতর মৃত্যুর হার কমানো যায়। ভারত সরকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই যোজনাটি অন্যান্য উদ্দেশ্য গুলি হল:

• এটা নিশ্চিত করা যে গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলার দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় মাসিকে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারা পরীক্ষা হবে

• দরকারি ডায়াগনস্টিক সেবা, পরীক্ষা এবং পরামর্শ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রদান করা

• যথাযথ তথ্য প্রমাণাদি গর্ভবতী মহিলার পরীক্ষা করার পরে সুরক্ষিত রাখা

• যথাযথ এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অ্যানিমিয়া বা উচ্চ রক্তচাপ বা শর্করা রোগের ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলাদের পরীক্ষার পরে

  Article continues below advertisment

• উচ্চ বিপদযুক্ত গর্ভাবস্থাগুলিকে চিহ্নিত করা এবং তালিকাভুক্ত করা

• যথোপযুক্ত জন্ম পরিকল্পনা এবং জটিলতা গুলিকে পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা

• গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করা যাতে যে কোন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অসুবিধা শুরুতেই অনুধাবন করা যায়

• যথাযথ ব্যবস্থা গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে নেওয়া যারা অপুষ্টিতে ভুগছেন

কিভাবে পি এম এস এম এ বিনামূল্যে গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে?

• পি এম এস এম এ পরিকল্পনাটি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের দ্বারা আনা পরিকল্পনাগুলির মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সাহায্যকারী বিশেষত গ্রামাঞ্চলে। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সব সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গুলি এই পরিকল্পনার আওতায় পড়ে

  Article continues below advertisment

• সরকারি আইন অনুযায়ী এই কেন্দ্রগুলি বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করে প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে বিশেষত ৯ মাস চলাকালীন। এই পরীক্ষাগুলি সব ধরনের পরীক্ষা যেমন সাধারণ মূল্যায়ন, ওজন পরীক্ষা, হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা, রক্তচাপ পরীক্ষা, এবং অন্যান্য রক্ত সম্পর্কিত পরীক্ষাগুলি করে

• পি এম এস এম এ পরিকল্পনাটি প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহায়তা একটি অধিকারের মাধ্যমে সুনিশ্চিত করে। এমনকি বেসরকারি সংস্থাগুলি যেগুলো এই পরিকল্পনার আওতায় থাকে, তারাও একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে দিতে বাধ্য থাকে

• এ কথা মোটামুটি সবারই জানা যে, বেশিরভাগ ভারতীয় মহিলাই নিজেদের স্বাস্থ্য বা গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত জটিলতা গুলির ক্ষেত্রে খুব একটা সচেতন নয় বিশেষত গ্রামাঞ্চলে বা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিকাঠামোতে এবং এজন্যই বেশিরভাগই গর্ভবতী মহিলারা অপুষ্টিতে ভোগেন যেহেতু তাদের কাছে দরকারি উপাদান মজুদ থাকে না। তাই তারা সঠিক পরিমাণ পুষ্টি বা খাদ্যাভ্যাস গর্ভাবস্থায় পান না। এর ফলস্বরূপ তারা অপুষ্টি রুগ্ন দুর্বল এবং অস্বাভাবিক বাচ্চার জন্ম দেয়

• এই অস্বাভাবিকতা যথাসময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সঠিক নির্দেশের মাধ্যমে এড়ানো যায়। যত তাড়াতাড়ি গর্ভবতী মহিলাকে সরকারি স্বাস্থ্যপরিসেবার আওতায় এনে ফেলা যায়, ততই এ ধরনের বিপদ এড়ানো যায়; এ ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব এবং দারিদ্র্য মূল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু পি এম এস এম এ পরিকল্পনাটি গর্ভবতী মহিলাদের অধিকার স্থাপন করেছে। ৯ মাসের পরীক্ষার দ্বারা এই পরিকল্পনাটির মাধ্যমে তারা নিজেরাই যে কোন সরকারি হাসপাতালে বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শারীরিক পরীক্ষা বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা গর্ভাবস্থায় করাতে পারেন

• এই পরিকল্পনাটির মাধ্যমে অস্বাভাবিক শিশুর জন্মের হার গুরুত্বপূর্ণভাবে কমেছে কারণ সঠিক সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং যথাযথ নির্দেশাবলী, দরকারী পুষ্টি গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে এই পরিকল্পনাটির দ্বারা। আগে গর্ভবতী মহিলা সারাদিন কাজের পরে এক বেলা খাবার পেতেন

  Article continues below advertisment

• পি এম এস এম এ গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে জননী সুরক্ষা যোজনার সাহায্যে। এই সুরক্ষাটি যেকোনো গর্ভবতী মহিলাকে বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতালে প্রসবের সুবিধা দেয়। এই সুবিধা কিছু বেসরকারি হাসপাতালেও মজুদ আছে

ইউনিসেফ এর গবেষণা অনুযায়ী প্রসব পরবর্তী জটিলতা এবং সদ্যজাতের মৃত্যু সাধারণত অপুষ্টির কারণেই হয়ে থাকে; যেটা সঠিক সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং যথোপযুক্ত আহারের মাধ্যমে এড়িয়ে যাওয়া যায় সে দিক থেকে দেখতে গেলে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশংসনীয় পরিকল্পনা কারণ এটি বিভিন্ন গর্ভবতী মহিলাদের এবং সদ্যজাতদের জীবন দান করেছে। কিন্তু যদি সরকার যথার্থভাবেই এই পরিকল্পনাটির সফলতা নিশ্চিত করতে চায় এসব উদ্দেশ্যগুলি পূরণের মাধ্যমে, তাহলে সরকারকে বিনামূল্যে আহার্যের ব্যবস্থা গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যে সেই আহার্য তাদের অব্দি পৌঁছচ্ছে কিনা।