VIEW PRODUCTS
Article Continues below advertisement
Rituals & Customs
4 April 2023 আপডেট করা হয়েছে
Article Continues below advertisement
লোকাচারে বলা হয় গর্ভবতী মহিলাদের সাত এবং আট মাস সময়ের ব্যবধানে আত্মীয়দের উচিত তাদের আদর যত্ন করে খাওয়াতে - একেই সাধ খাওয়ানো বলে। এখনকার দিনে অবশ্য এই স্বাদ খাওয়াটা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে একটু পরিবর্তিত হয়েছে; এখন আত্মীয়রা আর বেশি রান্না করে খাওয়ায় না বরং একজনই রান্নার লোক হিসেবে নিযুক্ত হয় এবং গর্ভবতী মহিলা এবং বাকি সব আমন্ত্রিতদের জন্য বিভিন্ন পদ রান্না করেন। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার সাধ অনুষ্ঠানটি যথাযথভাবেই পালিত হয় আগের মতনই, শুধু তার রকম ফের ঘটেছে যুগের সঙ্গে সাধের অনুষ্ঠানে সাধারণত লোকাচার অনুযায়ী কোন বাজা মহিলার উপস্থিত থাকা অমঙ্গল, তাই যেসব মহিলার বিয়ের অনেক বছর পরেও কোন বাচ্চা হয় না বা মৃত বাচ্চার জন্ম দেয়, সেই সব মহিলাকে সাধের অনুষ্ঠান থেকে দূরে রাখা হয়। তবে আজকের যুগে, বিজ্ঞানের যুগে, মোটামুটি সবাই একথা বুঝে গেছে যে সন্তান হওয়া বা না হওয়া কোনভাবেই শুধুমাত্র একজন মহিলার দোষের ওপর নির্ভর করে না; তাই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই নিয়ম অনেকাংশেই পালিত হয় না; যদিও প্রাচীনপ্ ন্থি মানুষগণ এখনো এই নিয়মকে নিষ্ঠা ভাবে পালন করে এবং পালন করতে উৎসাহ দেয়
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী গর্ভবতী মহিলা হাটে বাজারে গেলে বা বাড়ির বাইরে বেরোলে সবসময় একটি সুপারি কাটার জাতি রাখেন। মনে করা হয়, এটি রাখলে গর্ভবতী মহিলার ওপর কুদৃষ্টি বিশেষ পড়েনা।
গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে শনি ও মঙ্গলবার বাইরে বেরোনো অমঙ্গল হিসেবে ধরা হয়। মনে করা হয়, শনি ও মঙ্গলবার বাইরে বেরোলে খারাপ হাওয়া লেগে যায়। যা সন্তানের পক্ষে ক্ষতিকর হয়। প্রকারান্তরে এও বলা হয়, শনি ও মঙ্গলবার কোন গর্ভবতী মহিলার শ্যাওড়া গাছের তলা দিয়ে যাওয়া উচিত না। মনে করা হয়, শ্যাওড়া গাছ সব রকম অপদেবতার আশ্রয়স্থল আর গর্ভবতী অবস্থায় যেহেতু মহিলা শুধুমাত্র নিজের ভালো-মন্দের জন্য দায়ী থাকে না, বরং অনাগত ছোট্ট প্রাণটির জন্য দায়ী থাকে তাই সব দিক থেকে বিপদকে দূরে রাখতে শ্যাওড়া গাছের তলা দিয়ে না যাওয়াই ভালো। কোন কোন অঞ্চলে আবার এও মনে করা হয় যে, যদি কোন সধবা মহিলা সন্তান লাভে ইচ্ছুক হয়েও পড়ে অসমর্থ হন, তাহলে সেই মহিলার ক্ষেত্রে জিগা গাছের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সই পড়ে পাতানোয় উপকার হয়। গর্ভবতী নারীরা যাতে কোনরকম বিপদের সম্ভাবনা না বাড়িয়ে প্রসব করতে পারেন, তাই বোঝার মাধ্যমে জ্যান্ত হাঁস ছুঁয়ে মিউজিবাই নামক নারী দেবতার পূজো করেন।
প্রসব পরবর্তীকালেও বিভিন্ন লোকাচারের উল্লেখ বাঙালি সংস্কৃতিতে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সদ্যজাতর হাতে লোহার বালা পড়ানো হয় ধরে নেওয়া হয়, যেই লোহার বালা সদ্যজাতকে ভূত- প্রেতের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। আবার প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, কপালে এবং চোখের পাশে কাজলের টিপ দিতে হয়। এইটি শিশুকে যেকোনো রকমের কুনজর থেকে রক্ষা করতে পারে। সন্তান জন্মের পরে প্রসূতিদের সাধারণত একটি পৃথক ঘরে রাখা হয় - যাতে আঁতুড় ঘর বলা হয়। সন্তান জন্মের পরে একজন প্রসূতি ৩০ দিন পর্যন্ত থাকে। বাঙালি লোকাচার অনুযায়ী সেই সময় যে ঘরটিতে সে থাকে, সেই আঁতুড় ঘর থেকে সব রকম ঋণাত্মক শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য এবং ভূত-প্রেতের আক্রমণ দূরে রাখার জন্য কাটাযুক্ত বৃক্ষ ঘরের চারপাশে রেখে দেওয়া হয়। বাঙালি লোকাচারে আবার এও কথিত আছে যে জন্ম বারে বা জন্ম মাসে বিয়ে হয় না, তাতে জাতক-জাতিকার জীবন সুখের হয় না।
নবজাতকের মস্তক মুন্ডন বা চুল কাটার পর নামকরণ হয়। বাঙালি লোকাচার অনুযায়ী এই নামকরণটি হয় জন্মের ঋতু, মাস, বা দিন অনুযায়ী যেমন যদি কারোর সোমবার জন্ম হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে তার নাম হতে পারে সমারু, বুধবার হলে উদারু, বৃহস্পতিবার হলে বিষাদু, আবার শুক্রবার হলে শুকারো; যদিও এ প্রথা এখন আর চলে না। আবার কার্তিক মাসে কারোর জন্ম হলে তার নাম হতে পারে কাতিরাম, ফাল্গুন মাস হলে ফাগুনা। এই নামকরণের বৈচিত্র মেয়েদের ক্ষেত্রেও দেখতে পাওয়া যায় যেমন চৈত্র মাসে জন্মানো মেয়ের নাম হয় চৈতি, পৌষ মাসে জন্মানো মেয়ের নাম হয় পৌষালী, আবার সোমবার জন্মালে মেয়েটির নাম হয় সমারী। সন্তান যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে তখন ৭,৯, অথবা ১১ মাসে তার মুখে ভাতের অনুষ্ঠানটি পালন করা হয় যেটাকে ভাত ছোঁয়া অনুষ্ঠান বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই অনুষ্ঠানটিতে লোকাচার অনুযায়ী একটি জলপূর্ণ ঘটের মধ্যে সিঁদুর দ্বারা একটি মূর্তি এঁকে তার উপর সুপারি গাছের পাতা এবং আম্রপল্লব রাখা হয় একটি চালুনির উপর পাঁচটি ছোট প্রদীপ দিয়ে রেখে তার সামনেই সন্তানকে প্রথম মুখে ভাত দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সন্তানের মামা এই শুভ কাজটি করে থাকেন অনেক পরিবারে আবার এই সময়টিতে বিয়ের অনুষ্ঠানের মতই গান-বাজনার প্রচলন আছে
লোকাচারের এই অনুষ্ঠানটিতে অনুষ্ঠানের দিন গুনিন বাড়িতে আসেন এই গুনিন হলেন তিনি, যিনি জন্মের মুহূর্তে নবজাতককে একটি জন্ম কবজ বা জাত কবজ দেন। অবশ্যম্ভবীভাবে এই পুরুষটি মন্ত্র তন্ত্রের অধিকারী হয়ে থাকেন। শিশুর জন্মের ঠিক তিনদিন পরে এক কামান দেওয়া হয় এবং একমাস পূর্ণ হলে দুই কামানই দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, ও সূত্র এই চারটি ভাগে বাঙালি সমাজ বিভক্ত এবং সেই অনুযায়ী নিয়ম-কানুনেরও অনেক পার্থক্য দেখা যায়। যেমন ক্ষত্রিয়দের ক্ষেত্রে ১৩ অথবা ৩০ দিনের মাথায় এই অনুষ্ঠানটি হয়। সন্তানের জন্মের ঠিক পর থেকেই ওঝার কেরামতি দেখতে পাওয়া যায়। শিশুর জন্মের ঠিক পরেই গুনিন বা ওঝা প্রথম জাত কবজ টি দেন। এটি সুতোর তৈরি এবং মন্ত্রপুত করে হাতে বেঁধে দেওয়া হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী এটির ফলে শিশুর আর কোন ভয় থাকে না বা তার কোনরকম জীবন হানির আশঙ্কা থাকে না। সর্বশেষে বোস্টম বা বৈরাগী দিয়ে ও ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের নির্দেশ অনুসারে রাশিমাত্রিক দেব-দেবীর পূজা করা হয় যতক্ষণ না বৈরাগী নবুধ দেন ততক্ষণ অব্দি পিতা-মাতা বা সদ্যোজাত কেউই অসৌচ মুক্ত হতে পারেন না।
সন্তানের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্নপ্রাশন হওয়ার পরে বারো বা আঠারো মাস পূর্ণ হলে উভয় ছেলে এবং মেয়ের ক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিকভাবে মস্তক মুন্ডন বা চুল কাটার প্রথা প্রচলিত। এই প্রথাটি চুরাকরণ হিসেবে পরিচিত। বাড়ির বাইরের অংশের কোন একটি স্থানকে চিহ্নিত করে এবং তার চারপাশে যথাযথ নিশান স্থাপন করে একটি চরকা প্রতিষ্ঠা করা হয়। মনে করা হয়, বুড়িমা নামক দেবতার আশীর্বাদেই চুল গজায় তাই কেটে ফেলা চুল সেই দেবতার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়; অথবা অনেক সময় মাটিতেও পুঁতে রাখা হয়। এই মস্তক মুন্ডন বা চুরাকরণ অনুষ্ঠানটিও আবার বিভিন্নভাবে পালিত হয়; যেসব মায়েরা তার সন্তানের কোন রকম বিপদ অনুভব করেন গর্ভাবস্থায় তারা অনেক সময়ই বিভিন্ন দেবতার কাছে চুল মানত করেন। একটা সময়কাল নির্দিষ্ট করে এই মানত করা হয়। যে সকল পরিবারে এই ধরনের কোন মানব করা হয় বা পূর্বপুরুষের সময় থেকে পরম্পরা অনুযায়ী এই রীতি পালন করা হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে সেই নির্দিষ্ট সময়ের আগে সদ্য জাতির চুল কাটা যায় না এবং সেই সময়ে যখন চুল কাটা হয়, সেটি সেই মানত করা দেবতার উদ্দেশ্যে অর্পণ করতে হয়। পাকা কলা এবং চাল দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। চুল কাটার সঙ্গে সঙ্গে নাপিত কানের লতিতেও লোহা, বা রুপা, বা গাছের কাঁটা দিয়ে একটি ছেদ করেন।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাঙালি লোক সমাজে বা বাঙালি সংস্কারে বিভিন্ন রকমের লোকাচার আছে। বাঙ্গালীদের মধ্যে যেমন বিভিন্ন লোকাচার দেখা যায়, ঠিক তেমনি জাতি বা শ্রেণগত পার্থক্যের অনুযায়ী ও অনেক লোকাচার বিভিন্ন রকম হতে দেখা যায়। এই সব লোকাচারের মধ্যে অনেক লোকাচার এখন সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়েছে, আবার অনেক লোকাচার এমনও আছে যেগুলো যুগের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে এক আধুনিক রূপ নিয়ে আজকের দিনে পালিত হয়। পরিবর্তন জগতের নিয়ম তাই যেসব লোকাচার পরিবর্তিত হয়ে এখনো পালন করা হয় তার সম্পর্কে জেনে রাখা যেমন দরকার ঠিক তেমনি যেগুলো অবলুপ্ত বা বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেগুলোর ব্যাপারেও যদি জানা থাকে তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই লোকাচারের যুক্তিযুক্ত বা বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে যথার্থ ধ্যান-ধারণা করা যায়। শিকরের টান ছাড়া কোন গাছে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, ঠিক তেমনি লোকাচার স্থানীয় আচার বিচার যাতে অনেক কুসংস্কারও থাকে সেগুলো ছাড়াও একটি জাতির সম্পূর্ণ অবয়ব পরিস্ফূর্ত হয় না, তাই আধুনিক মনস্ক হিসেবে কোন সংস্কার বা লোকাচারকে সম্পূর্ণরূপে উড়িয়ে দেওয়ার আগে তার যুক্তিযুক্ত বিচার করা খুবই জরুরী - এটি যে শুধু জ্ঞান আহরণে সাহায্য করে তাই নয় বরং জাতির অগ্রগতির পথ সুনিশ্চিত করে।
Yes
No
Written by
Atreyee Mukherjee
Get baby's diet chart, and growth tips
At Mylo, we help young parents raise happy and healthy families with our innovative new-age solutions:
baby carrier | baby soap | baby wipes | baby shampoo | baby lotion | baby powder | baby body wash | stretch marks cream | stretch marks oil | baby cream | baby massage oil | baby hair oil |