গাইনোকোলজিতে ল্যাপারোস্কোপি

গাইনোকোলজিক্যাল ল্যাপারোস্কোপি কী?

গাইনোকোলজিকাল ল্যাপারোস্কোপি হল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে একটি ল্যাপারোস্কোপ (ক্যামেরা সহ একটি সরু টিউব) শ্রোণী ও তার চারপাশ পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ডাক্তারকে শরীরের ওই জায়গায় কোনো অস্বাভাবিকতা বা গ্রোথ পরীক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি ডিম্বাশয়ের সিস্ট অপসারণ, ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে জরায়ুর অপসারণ (হিস্টেরেক্টমি) বা এক্টপিক গর্ভাবস্থার মতো বড় অস্ত্রোপচার করতেও ব্যবহৃত হয়। গাইনোকোলজিক্যাল ল্যাপারোস্কোপি ওপেন সার্জারির চেয়ে একটি নিরাপদ বিকল্প।

কেন এটি করা হয়?

গাইনোকোলজিতে ল্যাপারোস্কোপি নিম্নলিখিত রোগগুলি নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়।

• এন্ডোমেট্রিওসিস
• ওভারিয়ান টিউমার বা সিস্ট
• ফাইব্রয়েড
• শ্রেণীতে অবস্থিত ক্ষত থাকা টিস্যু
• শ্রোণীর প্রদাহজনক রোগ
• শ্রোণীতে পুঁজ
• এক্টপিক প্রেগন্যান্সি
• ওভারিয়ান ক্যান্সার
• স্থানচ্যুত হওয়া শ্রোণী

গাইনোকোলজিক্যাল ল্যাপারোস্কোপি নিম্নলিখিত অবস্থার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

• ডিম্বাশয় অপসারণ (ওফোরেক্টমি)
• জরায়ু অপসারণের জন্য ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি (হিস্টেরেক্টমি)
• ফাইব্রয়েড অপসারণ
• টিউবাল লাইগেশন (গর্ভধারণ রোধ করতে ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লক করা)
• এক্টপিক প্রেগন্যান্সি বাদ দেওয়া
• অসংযম (প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ না করতে পারা)
• স্থানচ্যুত হওয়া জরায়ু

প্রক্রিয়াটি শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া

ল্যাপারোস্কোপিক গাইনোকোলজিস্ট রোগ নির্ণয়ের জন্য ইমেজিং পরীক্ষার পরামর্শ দেন। প্রত্যেককে অবশ্যই তাদের চিকিৎসার ইতিহাস ও ওষুধ সম্পর্কে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিতে হবে। প্রক্রিয়াটি শুরু করার কয়েক দিন আগে ডাক্তার সেই ওষুধগুলি গ্রহণ বন্ধ করতে বলতে পারেন। গাইনোকোলজিক্যাল ল্যাপারোস্কোপি একটি রোগ নির্ণয় করতে 30 থেকে 60 মিনিট সময় নেয়। কিছু চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটি বেশি সময় নিতে পারে।

প্রক্রিয়া চলাকালীন

প্রক্রিয়া চলাকালীন যাতে কোনো সেই ব্যক্তির ব্যথা অনুভব না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তার সাধারণ অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে থাকেন। কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের একটি ছোট নিডল্ পেটে ঢোকানো হয়। এটি প্রক্রিয়া চলাকালীন অঙ্গগুলিকে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করে।

নাভিতে একটি ছোট ফুঁটো করা হয় এবং ল্যাপারোস্কোপ ঢোকানো হয়। স্ক্রিনে পরিষ্কার ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এটি ডাক্তারকে অস্বাভাবিকতাগুলি পরীক্ষা করতে এবং রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে। জরায়ুর ল্যাপারোস্কোপির ক্ষেত্রে, বেশ কয়েক জায়গায় কাটা হয় এবং এইগুলির মাধ্যমে অন্যান্য যন্ত্র শরীরে ঢোকানো হয়। ল্যাপারোস্কোপের নির্দেশনায় একজন সার্জন এই পদ্ধতিটি সম্পাদন করে থাকেন।

প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, সমস্ত যন্ত্রগুলি বের করে নেওয়া হয়। কাটা জায়গাগুলি পরিষ্কার করা হয়, সেলাই করা হয় এবং সঠিকভাবে ব্যান্ডেজ করা হয়। অ্যানেস্থেশিয়ার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য একজন ব্যক্তিকে রিকভারি রুমে রাখা হয়।

প্রক্রিয়ার পরে

নার্সরা গুরুতর লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং অ্যানেস্থেশিয়ার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার অপেক্ষা করবেন। পদ্ধতির ধরণের উপর নির্ভর করে, রোগী সেই দিনই বা কয়েক দিন পরে বাড়ি যেতে পারেন। নাভিতে ব্যথা হওয়া এবং ক্ষত হওয়া স্বাভাবিক।

ল্যাপারোস্কোপিক গাইনোকোলজিস্ট রোগীকে বাড়িতে পাঠানোর আগে সব বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে দেন। নির্দেশাবলীর পাশাপাশি, ডাক্তার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ব্যথার ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিকও লিখে দেবেন। কয়েক সপ্তাহ বা এক মাসের মধ্যেই একজন তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে ফিরে যেতে পারেন।

জরায়ু অপসারণ করা হলে কী হয়?

ইউটেরাস ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি হল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে জরায়ু অপসারণের জন্য ল্যাপারোস্কোপ ব্যবহার করা হয়। বাকি সার্জারি ল্যাপারোস্কোপির গাইনোকোলজিস্ট করে থাকেন এবং যোনিপথের মাধ্যমে জরায়ু অপসারণ করেন।

জরায়ু ল্যাপারোস্কোপির উপকারিতা

ওপেন সার্জারির তুলনায় ল্যাপারোস্কোপিক জরায়ু অপসারণের নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি হল-

• কম ব্যথা
• ন্যূনতম রক্ত বেরোনো
• হাসপাতালে কম দিন থাকা
• দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা
• সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস

ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি কি নিরাপদ?

ওপেন সার্জারির তুলনায় জরায়ুতে বা অন্য কোনো চিকিৎসার জন্য ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি একটি নিরাপদ এবং বেশি কার্যকর বিকল্প হিসেবে ধরা হয়। শুরু করার আগে এই পদ্ধতির ঝুঁকি এবং সুবিধাগুলি বুঝতে ল্যাপারোস্কোপির একজন গাইনোকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করুন।

ঝুঁকি/জটিলতা

নিম্নলিখিত কারণগুলি গাইনোকোলজিকাল ল্যাপারোস্কোপির পরে জটিলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

• স্থূলতা
• দীর্ঘস্থায়ী অন্ত্রের রোগ
• শ্রোণীতে সংক্রমণ
• গুরুতর এন্ডোমেট্রিওসিস
• হার্ট সার্জারি
• পেটের সার্জারি
• ফুসফুসের অবস্থা
• হৃদপিণ্ডের অবস্থা
• কম ওজন
• বার্ধক্য

গাইনোকোলজিকাল ল্যাপারোস্কোপির পরে একজন ব্যক্তি নিম্নলিখিত জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন।

• এলার্জি
• নার্ভের ক্ষতি
• রক্ত জমাট বাঁধা
• প্রস্রাব করতে সমস্যা
• জরায়ু বা শ্রোণীর আশেপাশে ক্ষতি
• রক্তপাত
• ব্যাথা
• ক্ষত
• বমি-বমি ভাব
• বেদনা
• ক্লান্তি
• কাঁধে ব্যথা
• হার্নিয়া
• সংক্রমণ

কখন ডাক্তার দেখাবেন

জরায়ু ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির পরে দীর্ঘ সময়ের জন্য নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি অনুভব করলে একজন ব্যক্তির অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

• অতিরিক্ত জ্বর
• রক্তপাত
• সার্জারির জায়গায় সংক্রমণ
• সাংঘাতিক পেটে ব্যথা
• বমি-বমি ভাব
• লালভাব
• ফোলা ভাব
• শ্বাসকষ্ট
• মাসিককালীন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ

উপসংহার

গাইনোকোলজিকাল ল্যাপারোস্কোপি হল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ওপেন সার্জারির তুলনায় একটি নিরাপদ এবং কার্যকর বিকল্প। সিস্ট, ফাইব্রয়েড বা প্রজননতন্ত্রে ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা করানোর জন্য আদর্শ। কিছু ব্যক্তি রক্তপাত, সংক্রমণ বা হার্নিয়ার মতো জটিলতা অনুভব করতে পারেন। ভীষণ জ্বর, তীব্র পেটে ব্যথা এবং বমি-বমি ভাবের মতো উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের থেকে পরামর্শ নিন।